২০২৩ সালের জানুয়ারিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) সংযোগ সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারিতে। খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট প্রবেশদ্বার হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নের কাজ তিন দফা সময় বাড়িয়ে সাড়ে ২৯ মাসেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ। কাজের এই ধীরগতির কারণে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ক্ষুব্ধ প্রকল্পের অর্থায়নকারী সংস্থা এডিবি’র প্রতিনিধি দল ও কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন। কেসিসি থেকে তাদের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করারও আল্টিমেটাম দিয়েছিল। এতকিছুর পরও আড়াই বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে সড়কটি’র কাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শেষ না হওয়ায দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাধারণ পথচারীরা। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
সড়কটিতে দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুয়েট ছাড়াও খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই),গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুল, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খানজাহান আলী থানা শিক্ষা অফিস, প্রতিভা প্রি- ক্যাডেট স্কুল, আল হিরা মাদ্রাসাসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, প্যাথলজি ও দোকানপাট রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ সাধারণ পথচারী প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় এক বছর হল সড়কটি’র গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে কালভার্টের একাংশ নির্মাণ করে ঠিকাদার। বাকি অংশ নির্মিত না হওয়ায় সড়কের ওই স্থানটি দিয়ে চলাচলকারি বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, যানবাহন চালকসহ পথচারীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। এছাড়া প্রায়শই স্থানটিতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে । কুয়েট মেইন গেট থেকে পকেট গেটের সামনের অংশটি সারাক্ষণ ছাত্র-ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণায় ব্যস্ত থাকে। দীর্ঘ ভোগান্তির পর পকেট গেটের সামনে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হলেও ওই স্থানটিতে সড়কের বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে এবং কালভার্টের উভয় পাশে কর্দমাক্ততার কারণে চলাচলে সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া কোন কারণ ছাড়াই ৬ মাস পূর্বে কুয়েট সংযোগ সড়কের প্রবেশদ্বারের অটো স্ট্যান্ডের সামনে থেকে কুয়েট প্রধান ফটক পর্যন্ত ৩০০ মিটার চলাচলের উপযোগী ভালো সড়কটি ভেকু দিয়ে খুঁড়ে বালি পাথরের মিক্সিং বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি কেসিসি’র সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক কুয়েট সংযোগ সড়ক আধুনিকায়নের কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুল পর্যন্ত ১১৮৫ মিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, সড়কের দু’পাশে ড্রেন নির্মাণ এবং পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাত নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সড়কটি হবে দুই লেনের। এজন্য সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার নির্মিত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট। ১ ফুট উঁচু করা হবে সড়কটি। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে তৈরি করা হয়েছে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা রয়েছে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড এবং সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার উপর স্থাপন করা হবে দৃষ্টিনন্দন ‘কুয়েট মনুমেন্ট”।
কেসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কের কার্পেটিংয়ের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে হয়তো বিলম্বিত হচ্ছে। তারা আমাদের কথা দিয়েছে খুব দ্রুতই তারা কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করবে। বিষয়টা নিয়ে আমরাও ২/৩ দিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে সিটিং দিব’।
খুলনা গেজেট/এইচ